ঢাকা, সোমবার   ২৯ এপ্রিল ২০২৪

পিটার হাসকে বহিস্কার করবেনা বাংলাদেশ 

ফজলুল বারী

প্রকাশিত : ১৯:৩৭, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ভিসা নীতি-ভিসা নীতি রব রীতিমতো ভীতি আতংকের পাশাপাশি হাস্য কৌতুকেরও সৃষ্টি করেছে। দিল্লীতে বাইডেন সেলফি তুললেন শেখ হাসিনা আর তার মেয়ে পুতুলের সঙ্গে! শেখ হাসিনার পাশাপাশি শেখ রেহানাকেও নরেন্দ্র মোদী নিয়ে গেলেন ছবির ফ্রেমে! আর বিএনপি যেটা পারলোনা সেটা করতে যেন ব্যস্ত হয়ে গেলেন ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস!

উজ্জ্বল ছবিগুলো অনুজ্জ্বল করতে ভিসা নিষেধাজ্ঞার নতুন সোপান উগড়ে দিলেন অনলাইনে! বাংলাদেশের বিচারপতি সাংবাদিক কাউকে তিনি আস্ত রাখবেন না! রীতিমতো উস্কানিমূলক রাষ্ট্রদূতের বডি ল্যাংগুয়েজ! অনেকেই দাঁতে দাঁত চেপে অনেককিছু সহ্য করে চলেছেন। 

আমেরিকা বলছে ভিসার বিষয়টি তাদের আইনে গোপন বিষয়, তাই তারা কোন নাম তালিকা প্রকাশ করবেনা। ভিসার বিষয়টি সব রাষ্ট্রের এমন নিজস্ব। বাংলাদেশ চাইলে পিটার হাসের ভিসা বাতিল তাকে বহিস্কারও করতে পারে। পিটার হাসও যেন চাইছেন তাকে বহিস্কার করে না কেন! বহিস্কার করলেতো তার প্রমোশনও হতে পারে!

আইনগত বিষয় উল্লেখ করে আমেরিকা বলছে তারা কোন তালিকা প্রকাশ করবেনা। অথচ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে যার খুশিমতো তালিকা ছাপছেন! অনেকে পোষ্ট করছেন ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বক্তব্য সহ ফটোকার্ড! এসব দেখলেই বোঝা যাচ্ছে ভূয়া ফটোশপ! 

একজন ফটো সাংবাদিক এখানে গুমের শিকার হয়েছিলেন। কারাগারেও ছিলেন বেশ কিছুদিন। তিনি সম্প্রতি দেশের বাইরে গিয়ে যে সব পোষ্ট দিচ্ছেন এতে মনে হচ্ছে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য গেছেন! তার ধারণা এসব পোষ্ট তার রাজনৈতিক আশ্রয় প্রাপ্তিতে কাজে লাগবে! তিনি কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান বিচারপতির নামের তালিকা দিয়েছেন! তাদের নাম নাকি আছে মার্কিন ভিসা নিষিদ্ধের তালিকায়!

এটা সত্য হলে কথিত মার্কিন ভিসা নীতিই প্রশ্নের মুখে পড়বে। কারন সংশ্লিষ্ট বিচারপতিগণ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির রায় দিয়েছেন। জিয়া-এরশাদের সামরিক শাসনের রক্ষাকবজ সংবিধানের পঞ্চম, সপ্তম সংশোধনী অবৈধ বলে রায় দিয়েছেন এসব বিচারপতি। তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল ঘোষনা করে রায় দিয়েছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক। সদ্য বিদায়ী প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছেন তিনি কখনও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাননি। যাবেনও না। তার নামটিও ওই সাংবাদিকের পোষ্টে আছে। 

বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে মার্কিন সখ্য নতুন নয়। যুদ্ধাপরাধীদের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে। মার্কিন বিরোধিতা স্বত্ত্বেও বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে যাওয়ায় নতুন দেশকে স্বীকৃতি দিতেও তারা দেরি করেনি। আবার তাদের বিরোধিতা স্বত্ত্বেও বাংলাদেশ স্বাধীন করার প্রতিশোধ নিতে তারা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করিয়েছে। 

হত্যাকান্ডের পর খুনিদের সরকারকে অতিদ্রুত স্বীকৃতি দিয়েছে মার্কিন সরকার। সেই হত্যাকান্ডের বিচার বন্ধ রাখতে ইনডেমনিটি যুক্ত পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ ঘোষনা করে যে বিচারপতি রায় দিয়েছিলেন তাঁকেও নাকি রাখা হয়েছে ভিসা নিষিদ্ধের তালিকায়। সেই বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক সম্প্রতি মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে দেশ থেকে বহিস্কার করতে বলেছেন।

যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর ফাঁসি ঠেকাতে লবিস্ট ফার্মের অর্থ পুষ্ট মার্কিন প্রভাবশালীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব ফোন তদবিরকে আমলে নেননি। এখন বলা হচ্ছে সেই ফাঁসির রায় দানকারী বিচারপতিদেরও রাখা হয়েছে কথিত ভিসা নিষিদ্ধের তালিকায়!

বিচারপতি খায়রুল হকের নামও ফেসবুকের কথিত তালিকায় আছে! তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে রায় দিয়েছিলেন বিচারপতি খায়রুল হক। বিএনপি বরাবর বলে আসছে তারা ক্ষমতায় গেলে এই বিচারপতিকে বিচারের আওতায় আনবে! আর এখন যেন বিএনপির প্রতিশোধমূলক কাজ এগিয়ে রাখতে তার নাম প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকের তালিকায়! 

সুপ্রিমকোর্টের সর্বশেষ প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে বিচারালয় থেকেই আপত্তি আসে। বলা হচ্ছিল এতে করে বিচারপতিদের লোভে পেয়ে যাচ্ছে! বিচারপতি লতিফুর রহমান তেমন একজন ব্যক্তি ছিলেন। 

বিএনপির আস্থায় আসতে তিনি রাতের বেলা কোর্ট বসিয়ে ইনকিলাব সম্পাদকের জামিনের ব্যবস্থা করেছিলেন। জাতীয় সংগীত নিয়ে প্যারোডি ছাপার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়েছিল। আবার দায়িত্ব পেয়েই লতিফুর রহমানের ভূমিকার অভিজ্ঞতায় আওয়ামী লীগ তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় আস্থা হারিয়েছে। তার ভূমিকায় ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরতে পারেনি। 

বাংলাদেশকে চীনের বলয় থেকে বের করার চাপ হিসাবে এই ভিসা নীতি, এমন প্রচারও আছে। আর সুযোগ বুঝে চীন বারবার বাংলাদেশ সরকারকে আশ্বস্ত করে বলতে চাইছে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বৈদেশিক হস্তক্ষেপ গ্রহনযোগ্য নয়। রাশিয়াও সমান কথা বলছে। এখন বাংলাদেশকে চীন রাশিয়ার ব্লকে ঠেলে দিয়ে মার্কিন পক্ষ যাতে কোন সুযোগ নিতে না পারে সে ব্যাপারে বেশ সতর্ক শেখ হাসিনার সরকার। 

মিডিয়ার বিরুদ্ধেও ভিসা নীতি প্রয়োগের কথা বলেছেন পিটার হাস। আওয়ামী লীগ সমর্থক মিডিয়ার লোকজন এ নিয়ে ক্ষুব্ধ। কিছু পত্রিকায় লেখা হচ্ছে প্রশাসনে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে ভিসাতংকে। এই অংকটিও সামান্য হতে পারে। দিনশেষে মরি কি বাঁচি নীতিতে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় ধরে রাখতে মরিয়া ভূমিকা নিতে পারে প্রশাসনের বড় অংশ। 

আফগানিস্তানে পরাজিত আমেরিকার আবার সাগর মহাসাগর ধরে নিয়ন্ত্রণ চেষ্টা চলছে। প্রশান্ত মহাসাগর এলাকায় চীনের আধিপত্য ঠেকাতে হোয়াইট হাউসে ওই এলাকার নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন জো বাইডেন। বঙ্গোপসাগর এলাকায় চীনা প্রভাব ঠেকাতে ভারতকে দরকার আমেরিকার। ভারত আবার বলছে তাদের দরকার শেখ হাসিনকে। বাংলাদেশে ক্ষমতার পরিবর্তন হলে তার নিরাপত্তা সমস্যা দেখা দেবে। বিএনপি জামায়াত আমলে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বাংলাদেশে আশ্রয়দান, দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান আটকের ঘটনা তারা ভুলতে পারেনা।

শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর আওয়ামী লীগের প্রতিরোধ প্রস্তুতি বোঝা যাবে। দলের তরুন এক নেতা মির্জা আজম এক ভিডিও কনটেন্টে বলেছেন শেখ হাসিনা যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। মাথা নোয়াবেন না। শেখ হাসিনার এই দৃঢ়চেতা গুণ আছে। পদ্মা সেতুতে তা তিনি দেখিয়েছেন। 

বিএনপি নির্বাচনে আসবে এটা মাথায় রেখেই নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। সুষ্ঠু নির্বাচন, সরকার গঠনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন জয়ের লক্ষ্য নিয়ে দলটি কাজ করছে। ভোটের মাঠে কোন বিদ্রোহী প্রার্থী থাকতে পারবেনা। আগামী নির্বাচনের মাঠে এমন আরেক কঠোর শেখ হাসিনাকে দেখা যাবে। 

সাম্প্রতিক দিনগুলোতে বাংলাদেশে সরকারীদল মাঠের বিরোধীদল সবার মুখের ভাষার নাম ভিসা নীতি! রাজপথের আন্দোলনে সরকারকে পরাস্ত করতে না পারলে বিএনপিকে নির্বাচনে আসতে হবে। আন্দোলনে পরাস্ত করার অবস্থা বিএনপির নেই। নির্বাচনে বাধা দিলে আমেরিকা যদি ভিসা নীতি প্রয়োগ না করে তাহলে শরমে মুখ লুকানো দায় পড়ে যাবে! বিএনপির আন্দোলনের জোর বাড়াতে আমেরিকা একটার পর একটা চেষ্টা করে যাচ্ছে। ভিসা নীতির মেঘের ডমরু প্রচারকে বলা হচ্ছে তেমন একটি চেষ্টা! তবু আমেরিকাকে খুশি করতে পারছে না মরার বিএনপি!

(লেখক: ফজলুল বারী, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাংবাদিক, প্রতিষ্ঠাতা-অমর্ত্য ফাউন্ডেশন)


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


টেলিফোন: +৮৮ ০২ ৫৫০১৪৩১৬-২৫

ফ্যক্স :

ইমেল: etvonline@ekushey-tv.com

Webmail

জাহাঙ্গীর টাওয়ার, (৭ম তলা), ১০, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

এস. আলম গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান

© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি